নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের এমপি হচ্ছেন সেলিম ওসমান !

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২৫

মো. মনির হোসেনঃ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি-মনোনয়ন নিয়ে সম্প্রতি এক রাজনৈতিক বোদ্ধার সাথে নারায়ণগঞ্জ -৪, নারায়ণগঞ্জ -৫ আসন নিয়ে আলোচনা হলো, সে তার রাজনৈতিক হিসেব কষে দেখালেন নারায়ণগঞ্জের এই দুই আসনের এমপি এবার সেলিম ওসমান।

আমি তো অবাক! বলে কি লোকটি দেশের এই পরিস্থিতিতে এমন কথা, প্রথম তিনি নারায়ণগঞ্জ -৪ আসন নিয়ে একটি সুন্দর হিসেব দিলেন আমাকে।

উনার ভাষ্য হলো, ধরুন- বিএনপি এই আসনে কোন প্রার্থী দিলেন না তাদের ২০ দলীয় জোট থেকে কোনো প্রার্থী দিলেন, তাহলে তার মার্কা হবে কি ? আমি বললাম নিশ্চয় ধানের শীষ। তিনি বললেন না, এবার নির্বাচন কমিশন নতুন আইন করেছেন কোনো প্রার্থী যদি জোট থেকে নির্বাচন করে তাহলে তাহাকে তার নিজের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাহাকে খেজুর গাছ, রিক্সা, বট গাছ ইত্যাদি মার্কায় নির্বাচন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো এই মার্কায় এই দেশের মানুষ ভোট দিবে? এদেশের মানুষ ভোট দেয় নৌকা অথবা ধানের শীষে। সাধারণ মানুষ এই দুই মার্কাকে বেছে নেয়, তাই জোট প্রার্থী ফেল করার সম্ভাবনা ৯০%।

তবে যেহেতু এই আসনটি বিএনপিরই! কারন এখানে বিএনপি’র ভোটার বেশী। এখন ধরুন বিএনপির কোনো নেতা যদি স্বত্বন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান তাহলে দল তাকে বহিস্কার করবে! দল আর এটাই আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলির কালচার। আর সেই সাহস ও কোনো বুদ্ধিমান নেতা দেখাবেন বলে মনে হয় না। কারন এসময়ে যদি কেউ বহিস্কার হয় তাহলে তার ক্যারিয়ার শেষ। সুতারাং কেউ এই ঝামেলায় যাবে না, কারন যারা এখন মাঠে আছে নির্বাচনী প্রচারনায় বিএনপি নেতা মশিউর রহমান রনি, শাহ আলম, রাজীব, টিটো আরও যারা আছেন তারা উপরে উপরে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে ঘটবে তার উল্টো ।

এখন দল করে না এমন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী যদি নির্বাচন করে তাহলে তার নির্বাচনে জয়লাভ করার সম্ভাবনা বেশী। যেমন দরুন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তিনি একজন বিশাল ফ্যাক্টর, আর তাকে সমর্থন দিবে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ, বিএনপির একটি অংশ এবং কিছু নীরব ভোট ও তার ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক। আর সবচেয়ে বড় সমর্থন পাবে সে নারায়ণগঞ্জ-৫ এর সাবেক এমপি (পলাতক) সেলিম ওসমানের কাছ থেকে। কারন গত সরকারের সময় তিনি সব সময় সেলিম ওসমানের পাশেই ছিলেন। যদি ও কেউ কেউ বলবেন তখন কোন উপায় ছিলো না। সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের চালকের আসনে কিন্তু সেলিম ওসমান।

এবার দরুন নারায়ণগঞ্জ-৫ঃ এই আসনটিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিএনপিতে সদ্য যোগদানকারী ব্যবসায়ী মডেল গ্রুপের কর্নধার মাসুদ্দুজামানকে। বিএনপি স্থানীয় নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা ও করেছে। এখন তার অতীত কি বলে? অতীতে তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেতো সেলিম ওসমানের পাশে। আর এ বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ছবি, লেখালেখি ও হয়েছে, তার মানে সেও সেলিম ওসমানের লোক হিসেবেই পরিচিত। যদিও তৎকালীন সময়ে আরও অনেক আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে তাকে দেখা যেতো এবং সে সেলিম ওসমানের কাছ থেকে অনেক ব্যবসায়ী সুবিধা ও নিয়েছেন। সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের চালকের আসনে সেলিম ওসমানই।

লোকটির কথা শুনে কোনো উত্তর খুজে পেলাম না।

আর পাবই-বা-কোথা থেকে! বিএনপির হাই কমান্ডের মাথা যে মোটা তা তাদের কর্মকান্ড থেকেই বুঝা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার অতি নিকটবর্তী জেলাগুলি যেমন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, আওয়ামীলীগ কখোনো শরীকদের মনোনয়ন দিতেন না। কারন এই আসনগুলোতে নিজেদের এমপি না থাকলে সাংগঠনিক দূর্বলতা দেখা দিতে পারে। বিরোধী দলগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে! এই স্বাভাবিক বিষয়টি আওয়ামীলীগের মাথায় সব সময় থাকতো। কিন্তু বিএনপি তার উল্টো, তবে এই আসনগুলি জোট অথবা ব্যবসায়ীদের কাছে দেয়া হলে দল যে দূর্বল হয়ে পড়বে তা তারা উপলদ্ধি করতে পারছে না যে কাজটি মাথা মোটারাই করে।

বিএনপি ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে আসা নেতাদের অনুসারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকেরা।

অতএব এখনও সময় আছে বিষয়টি বিবেচনা করার, জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার। নইলে এমনো হতে পারে প্রতি জেলা ও থানা পর্যায়ে বিক্ষোভ হওয়ার জোড়ালো সম্ভাবনা আছে।

লেখক পরিচিতিঃ সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার্স বাংলাদেশের আলো ও সভাপতি ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।