চিন্তার ব্যবহার

প্রকাশিত: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৩

আব্দুল্লাহ আল ফারুক রিংকুঃ কীসের এত টেনশন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? কী নিয়ে এত হতাশা আপনার? পৃথিবীতে আসার সময় কি ভার্সিটির সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছেন, নাকি ব্যাংকের চেকবই নিয়ে এসেছেন? পৃথিবীতে আসার সময় আপনার কলিজার মানুষটিকে সাথে নিয়ে এসেছেন, নাকি বিদেশি কোনো ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন? খালি হাতে, উলঙ্গ শরীরে যার পৃথিবীতে আসা, তার হতাশ হওয়ার একটা সিঙ্গেল কারণও থাকতে পারে না না। কারণ এই পৃথিবীতে আপনি কিছুই হারাননি। শুধুই অর্জন করেছেন। জন্মের সময় যে কিছু নিয়েই আসে না, সে হারায় ই বা কী! তার হারানোর মতো আছেই বা কী !

আপনার কি মনে হয় কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আপনি এসে গেছেন পৃথিবীতে? আপনি ফেলনা নন, আপনি আবর্জনা নন। মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে পরিকল্পনা করেই পৃথিবীতে এনেছেন। কিছু চাওয়ার থাকলে তাঁর কাছে চান, কিছু বলার থাকলে তাঁকে বলুন। তাঁর সৃষ্টি করা অন্য কোনো মানুষের সফলতা দেখে হিংসা করবেন না। কাউকে নিয়ে কুৎসা রটাবেন না। কারো সম্পর্কে মিথ্যা বলবেন না। কারো মনে কষ্ট দিবেন না। কারণ আপনি কি জানেন না, কাদের নিয়ে আপনি খেলছেন? কাদের আপনি হিংসা করছেন? কাদের নিয়ে মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছেন? এরা তো তারাই যাদের সেই মহান সৃষ্টিকর্তা একটা পরিকল্পনা নিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন!

এত দুঃসাহস আপনার? আপনি এদের নিয়েই এসব করছেন? একটুও ভয় নেই? যতদিন বাঁচবেন মানুষকে ভালোবাসুন। কারণ মানুষকে ভালোবাসা মানেই হলো স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকে ভালোবাসা।

শুধু আপনার মতো একটা জীবনের আশায় প্রতিদিন দু’হাত তুলে প্রভুর কাছে কতজন যে প্রার্থনা করেন, তা যদি আপনি জানতেন তবে নিজেকে জীবন্ত সেলিব্রেটি ভাবতেন। দুপুরে খেতে না পাওয়া ছেলেটি আপনার মতো একবেলা খাবারের জন্য দু’হাত তুলে বসে আছে। দেখতে না পাওয়া অন্ধটি, হাঁটতে না পারা পঙ্গুটি, কথা বলতে না পারা বোবাটি আপনার মতো একটা জীবন পেলে অনায়াসেই তারা টিনের চালের ঘরটিকেই রাজপ্রাসাদের মতো উপভোগ করে বাঁচত। আপনি জীবন নিয়ে যখন হতাশ তখন অনেক মানুষ স্বপ্ন দেখছে আপনার মতো একটা জীবন পাওয়ার। ইনফ্যাক্ট আপনার জীবনটাই অনেকের টার্গেট, আপনার লাইফস্টাইলটাই অনেক মানুষের স্বপ্ন। কত মা-বাবা আফসোস করছে তার ছেলেমেয়েকে আপনার মতো কলেজে পাঠাতে না পেরে, তা যদি আপনি জানতেন তবে নিজেকে সবচেয়ে সুখী ভাবতেন ।

আপনি যা অলরেডি পেয়েছেন অনেক মানুষ সেসব পাওয়ার জন্য এখনও প্রতিদিন সংগ্রাম করছে। হয়তো অনেক বেশি কিছু পাননি জীবনে, কিন্তু যে অল্পটুকু পেয়েছেন সেগুলো পাওয়ার জন্যও অনেকে এখনো স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে। সবাই যে শুধু শাহরুখ খানকে ফলো করে তা না, আপনি শার্টটা ইন করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনাকে দেখেও কেউ না কেউ চিন্তা করে, ওরকম একটা শার্ট কিনতে পারলে সেও আপনার মতো ইন করে ফিটফাট হয়ে যাবে একদিন। সবাই যে শুধু আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে ফলো করে তা না, কেউ কেউ আপনার কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কলেজে যাওয়া দেখে আপনাকেও ফলো করে, যেন সেও একদিন এসএসসি পাস করে আপনার মতো কলেজে যেতে পারে। আপনি যখন আপনার জীবন নিয়ে চরম হতাশ তখন অপরপ্রান্তে আপনার মতো একটা জীবনের জন্য কেউ কেউ দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো নিজেকে ভালোবাসেন কি না? আপনার বর্তমান জীবনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আসলেই কৃতজ্ঞ কি না?

চোখে সুন্দর বলেই তিনি আপনাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে দুর্বল, ব্যর্থ কিংবা অপদার্থ ভাবছে সেটা কোনো বিষয়ই না। বরং এটা তো একবার ভাবুন, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আপনাকে চয়েজ করে শ্রেষ্ঠ জীবের উপাধি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

কারো কাছে আপনার পোকা ধরা দাঁতের হাসিটা বিশ্রী হতেই পারে, তবে মনে রাখবেন দিনশেষে আপনার মুখের হাসিটা দেখার জন্যই আপনার পরিবার অপেক্ষা করে। কাউকে কালো বলে অশ্রদ্ধা করার আগে ভাববেন তার গায়ের রংটা কে চয়েজ করেছেন। কোনো শিশুকে গরিব বলে অবহেলা করার আগে ভাববেন তাকে গরিব ঘরে কে পাঠিয়েছেন। কারো খাটো সাইজ শরীর দেখে হাসাহাসি করার আগে ভেবে দেখবেন কে তাকে এই সাইজে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই সবকিছুই স্রষ্টার পরিকল্পনা ছিল। যাকে তিনি যেভাবে দেখতে চেয়েছেন তাকে তিনি সেভাবেই পাঠিয়েছেন। যেটার ওপর মানুষের হাত নেই, সেটা নিয়ে তাকে অবহেলা করা মানেই হলো সৃষ্টিকর্তার প্ল্যানকে নিয়েই অবহেলা করা। ভালো থাকুন, ভালোবাসুন। সৃষ্টিকর্তার চোখে যা যা সুন্দর আমার চোখেও তা শুদ্ধতম, পবিত্র ও সুন্দর।

যদি শুদ্ধ চোখে তাকান একবার, পৃথিবীর বুকে পাবেন না কিছু ঘৃণা করার।

সবকিছু আপনার বিপরীত দিকে যাচ্ছে? আপনি যা চান ঠিক তার উল্টোটা হচ্ছে? এর মানে কি জীবনটাই শেষ? এর মানে কি জীবনটাই বৃথা? বিমান তো দেখেছেন, তাই না? কীভাবে উপরে উঠে যায় দেখেছেন? বাতাসের বিপরীতে? হ্যাঁ, পাইলট জানে, বিমানের গতিবেগ বাতাস কখনো রোধ করতে পারবে না, কারণ বিমানের গতিবেগ বাতাসের চেয়ে বেশি। আমি কোনো কিছু চাইবো, তার মান এটা নয় যে, সেখানে কোনো প্রতিকূলতা থাকবে না, সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। আপনি জীবনে সুখী হতে চান। তার মানে কি এটাই যে, আপনি চাওয়ামাত্র সুখগুলো চলে আসবে? ওই বিমানের গতি বাতাস ততক্ষণ আটকাতে পারে না, যতক্ষণ তার গতিবেগ বাতাসের চেয়ে বেশি থাকে। আপনার চাওয়ার গতিবেগ, ইচ্ছার গতিবেগ যদি প্রতিকূলতার চেয়ে বেশি থাকে তবে নিশ্চিতভাবে আপনার চাওয়াটাই গন্তব্যে পৌঁছাবে, প্রতিকূলতা নয় ।

জীবন এ প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে শেখার আছে, সেটা সমালোচনা বা উপদেশ এর মাধ্যমেই হোক তবে সর্বখেত্রে নিজেকে শিখার জন্য প্রস্তুত রাখুন।কাজ করার পূর্বেই পরিকল্পনা সেই অনুযায়ী কাজ করেন। আর মনে রাখবেন আপনার ভুল করা যাবে না কারন আপনার মেধা, বুদ্ধি, সুচিন্তা করার যোগ্যতা আছে। আর মনে রাখবেন ভুল করে অযোগ্য ব্যক্তিরাই।।

লেখকঃ প্রকাশক, চেঞ্জ নিউজ ২৪ ডট কম 
নির্বাহী পরিচালক, চেঞ্জ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।।