কে পাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়ন? প্রকাশিত: ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২৫ মো. মনির হোসেনঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে পালিয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক সাবেক সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান অংশগ্রহন করতে পারছেন না কারন তার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, সে পলাতক এবং একাধিক হত্যা মামলার আসামী হওয়ার কারনে। এবার বিএনপির মাঠ ফাকা, তেমন শক্ত কোন বিরোধী প্রার্থী নেই বললেই চলে। শ্রমিক লীগের একজন নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ সেও পলাতক, মাঠের রাজনীতিতে সেও অনুপস্থিত। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দেশের প্রধান দল বিএনপির নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহ আলম ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদ । ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির হাই কমান্ড যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন তারা । তবে নারায়ণগঞ্জে এখনো শামীম ওসমানের পক্ষে লোক আছে, বিপক্ষ লোক ও আছে, নিন্দুকের পাশাপাশি আছে প্রশংসাকারী। তার বন্ধু যেমন আছে, শত্রুরও অভাব নেই। তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ধারাও অবিরল। এক নজরে এমপি শামীম ওসমানঃ ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ওই আমলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা কর্মকাণ্ডের কারণে পরের দু’বার আর সংসদে যেতে পারেননি তিনি। ২০০৮ সালে তো মনোনয়নই পাননি। তবে ২০১৪ সালে তিনি স্থানীয় বিএনপির একটি অংশকেও পাশে পেয়েছিলেন। রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে ভোট ব্যাংক। সিদ্ধিরগঞ্জকে বলা হয় আওয়ামী লীগের অধিক প্রভাবাধীন এলাকা। আর ফতুল্লা থানা এলাকা বিএনপির। তবে ফতুল্লা থানা এলাকায় বিএনপির প্রভাবের বিষয়টি ২০১৪ সালে প্রশ্নের মুখে পরেছিলো। তখনকার থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও সিনিয়র সহ-সভাপতি কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু উভয়ই কাজ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে। আজাদ বিশ্বাস একই সঙ্গে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ছিলেন আর সেন্টু থানা বিএনপির আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় ডিএনডি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের প্রাক্কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে শামীম ওসমানের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা আজাদ বিশ্বাস ও মনিরুল আলম সেন্টু। এ দুই নেতা শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানের ব্যাপক প্রশংসা করে বক্তব্য দেন সেখানে। শামীম ওসমানকে নিজের নেতা বলে দাবি করে আজাদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ শামীম ওসমানের মতো সাংগঠনিক নেতা নারায়ণগঞ্জে আর নেই বলে তিনি জানান আরেক অনুষ্ঠানে। অন্য একটি অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের প্রশংসা করতে গিয়ে বিএনপির নেতা সেন্টু বলেন, ‘শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন। তাকে আবার জনগণ নির্বাচিত করবে।’ এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জে এক সমাবেশে এমপি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মতিন প্রধান। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে শামীম ওসমানের একটি শক্ত প্রতিপক্ষ থাকলেও এই সংসদীয় আসন এলাকায় তার বিরোধী সে রকম বড় কেই ছিলো না। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো তার মনোনয়নের পক্ষে, ফলে বিএনপির কিছু নেতার শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করাটা তার জন্য বাড়তি পাওয়া হয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শামীম ওসমান। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে যখন শুধু ফতুল্লা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছিল, তখন এ আসনের এমপি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, শামীম ওসমান নির্বাচিত হওয়ার পর এ এলাকায় কবরীকে আর দেখা যায়নি। নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন তিনি আর নির্বাচন করবেন না। ফলে শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহ আলম ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। দু’জনই দল বদল করে বিএনপির নেতা হন। তবে আরেক প্রার্থী অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও আছেন এই তালিকায়। একসময় শাহ আলম ছিলেন কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। দল ত্যাগ করে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন। একইভাবে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে এবং আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন আগে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতির পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েই ধানের শীষ প্রতীকে শামীম ওসমানের সঙ্গে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন গিয়াসউদ্দীন। তবে একাধিক সূত্র জানায়, এবার মনোনয়নের জন্য মাঠে নামলেও স্বস্তিতে নেই বিএনপির শাহ আলম ও গিয়াস উদ্দিন। কারন এরই মধ্যে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক তরুন নেতাদের নাম ও চলে এসেছে নির্বাচনের প্রচারে। বিএনপির শাহ আলম ও গিয়াস উদ্দিন এ দুজন নেতা ও তাদের অনুগতদের মাঝে তুমুল বিরোধ বিভক্তি রয়েছে। তবে কে পাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়ন? কেন্দ্র কি এবার নতুন কাউকে মনোনয়ন দিবেন? নানা জল্পনা কল্পনা চলছে এই আসনটির ভোটারদের মাঝে। এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পূর্বে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নেতা সালাউদ্দীন খোকা মোল্লাকে প্রচারণায় দেখা গেলেও নির্বাচনের পরে এখন আর তাকে এ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়না। তবে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি মূলত ওসমান পরিবার কেন্দ্রিক ছিলো। তাই ওসমান পরিবারও নেই জাতীয় পার্টিও নেই! আর অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে হয়তো প্রার্থী দিবেন, তবে তাদের ভোটের পরিমান খুবই কম। SHARES জেলা/উপজেলা বিষয়: