স্মৃতি বিজড়িত চেয়ারম্যান স্বপন ভাই

প্রকাশিত: ৯:০৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৩

মোঃ এ এইচ আশুঃ আমি আপনাকে অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, মার্জিত, মিষ্টিভাষী ও ধর্মভীরু বলে জানি। আসলে দীর্ঘ সময়ের পরিচয়ে যতটুকু দেখেছি, ততটুকু জুড়েই আপনার এই গুন গুলোই আমার চোখে পড়েছে। এর বাইরে আপনার অন্য কোন রুপ থাকলেও তা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি।

 

আপনার কিছু ব্যবহার আজ আমার কাছে শুধুই স্মৃতি। হয়তো একেই আচরণ আরও কারও সাথে করেছেন!! কিন্তু আমি যা পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট।

 

পরিচয়টা অনেক আগে থেকে হলেও কোভিট-১৯ এর পর থেকে দু-একটা স্মৃতিচারণ করে আজকের লিখা শেষ করবো।

 

ঘটনা-১ঃ করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতায় মানুষের লাশ দাফন-কাফনে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্তায় আমি, মোস্তাক মামা আর স্নেহের চক্ষু চিকিৎসক মাসুম সন্ধ্যায় স্বপন ভাইয়ের বাসায় যেয়ে ফতুল্লা ইউনিয়নের জন্য দাফন-কাফনের টীম করার প্রস্তাব করলে উনি খুব খুশী হয়ে রাতের মধ্যেই তালিকা করে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কারন উনি পরের দিন ডিসি মহোদয়ের কাছে তালিকা জমা দিতে চান। মীর ফরহাদ হোসেন, কামরুল ইসলাম অপু সহ অক্লান্ত পরিশ্রম করে তালিকা, সিভি, ছবি রেডি করে রাত-১২ টায় উনার বাসায় গেলে; উনি নিচে নেমে গেইট খুলে উদারমনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন (অথচ তখন হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলিতে বিধিনিষেধ ছিল)। তারপর কাজ শেষে মেইন রোড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন।

দাফনকাজে প্রায়ই কল দিয়েছি, রিসিভ করতে না পারলেও ৩০ মিনিটের মধ্যে কল ব্যক করেছেন, সেটা দিনে হোক কিংবা রাত ১ টায়।

 

ঘটনা-২ঃ চেঞ্জ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিটি অনুষ্ঠানে উনি যথা সময়ে উপস্থিত হতেন। সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানগুলোতে ২ বার উপস্থিত হতেও অনীহা করতেন না। নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন ও ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠান করার কারনে উনি আমাদের অনেক পছন্দ করতেন। চেঞ্জ ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সদস্য, বিশেষতঃ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল ফারুক রিংকু, ইঞ্জিনিয়ার আল আমীন আলী, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন, এডভোকেট মাহবুবুল হক ফুরকান, ব্যবসায়ী লুতফর রহমান মুন্না, শরিফুল ইসলাম তুষার, শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম সুজন, মাওলানা সাব্বির আহমাদ, এডভোকেট আবু সাঈদ প্রমুখদের দেখে উনার মন্তব্য ছিল “আমার মনে হয় এই চেঞ্জ ফাউন্ডেশনটা টিকবে”

 

ঘটনা-৩ঃ রমজানের ঈদের আগের দিন দুপুরে ফোন দিয়ে বলেন, আশু…. ভাই, ১০জন অসহায় নারী পাঠাতে পারবে? আমিও পাঠালাম। উনি সকলকে নগদ ১০০০/= টাকা করে দিলেন। অভাবের এই সময়ে অসহায় মহিলাগুলো অনেক খুশী হয়ে উনার জন্য দোয়া করতে ভুল করলেন না।

ঘটনা-৪ঃ কোরবানি ঈদের দিন সন্ধ্যায় কল দিলেন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বললেন, আশু…. ভাই, (…….) মাদ্রাসার হুজুরকে কি একটু বলবা দুইজন ছাত্র বাসায় পাঠাতে? আমি সে হুজুরকে বললাম। ছাত্ররা গেলো, উনি প্রায় ১০ কেজি কুরবানীর গরুর গোশত দিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পর ফোন দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করলেন না।

ঘটনা-৫ঃ কয়েকদিন আগে কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে উনার বাসায় গেলাম। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্মানে আমি সালাম দেওয়া ব্যতীত কোন কথা বলি নাই। সবাই বেড় হয়ে যখন রওয়ানা হয়েছি স্বপন ভাই বললেন, আশু…. ভাই, আজ আর কথা হলো না, বাসায় এসো।

ঘটনা-৬ঃ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর একটা কাজে উনার বাসায় গেলাম। আমি প্রবেশ করতেই স্বপন ভাই বললেন, আশু…. ভাই, কি মিষ্টি নিয়ে আসছো? আমার বুঝতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। উনি বললেন তোমার আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এইবার মিষ্টি খাওয়াও। তারপর পরামর্শ দিলেন, তুমি তো ভাই নামাজ-রোজা করো এখন থেকে ওপেন ভাবে আর্জেন্টিনা/ব্রাজিলের সাপোর্ট না করাই ভালো। উনিও এক সময় অনেক বড় পতাকা উড়াতেন, তাও জানালেন।

প্রায়ই উনি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমেন্টস করতেন নয়তো সাক্ষাতে আমার লিখা ভালো লাগে এই অনুভূতি জানাতেন। অনেককেই তুই বলে সম্বোধন করলেও আমাকে আশু বলার পর ভাই বলতেন।

এগুলো হচ্ছে উনার সরলতা, উদার মানুষিকতা। উনি অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র ছিলেন; যার সম্মান যতটুকু, তাঁকে সে সম্মান দিতে ভুল করতেন না। আমার মত ছোট মানুষের ফোন রিসিভ করতে অথবা রিসিভ করতে না পারলে ব্যক করতে একটুও ইগোতে লাগতো না, এটা উনার ভদ্রতা। প্রচুর ওয়াজ-মাহফিলে যেতেন এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসে থাকতেন, এটা উনার ধর্মভীরুতা।

 

উনি যে সহজ-সরল-ভাল মানুষ ছিলেন, তা উনার জানাজার মাধ্যমেই বুঝা গেছে, পুরো ৭ তলা মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর রাস্তাও পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

উনায় জায়গায় আমি/আমরা থাকলে হয়তো কখনোই এমন আচরণ করতাম না! চেয়ারের গরমে ভাব-সাব নিয়ে থাকতাম। দেখা হলে চিনেও না চিনার ভান করতাম। আমি উনার অনেক অধীনস্থদের মধ্যে যে অহংকার দেখেছি উনার মধ্যেও তা দেখি নাই।

 

আল্লাহ দয়া করে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন ভাইকে মাফ করে জান্নাত দান করুণ। এবং ফতুল্লা ইউনিয়নে উনার ও নূর হোসেন চেয়ারম্যানের মত ভালো মানুষ নির্বাচিত হওয়ার তৌফীক দান করুণ।

লেখকঃ শিক্ষক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী। সম্পাদক, চেঞ্জ নিউজ। সহ-সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।