আল্লাহ কাউকে এমন কষ্ট না দিক, আল্লাহ সবাইকে মাফ করে দিক। প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩ হসপিটালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ডাঃ ফেরদৌস আহমেদ তার ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেন, যা চেঞ্জ নিউজের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলঃ প্রতিটা এডমিশনে ভর্তি হতে আশা রোগি, তার সব আত্মীয়রা যখন চারপাশ দিয়া ঘিরে ধরে, মাথা আর কাজ করে না, তখন তাদের একটা কথা বলি, ‘বাবা এইটা মাছের বাজার না, এইখানে মাছ বেঁচতে বসি নাই এমনে রোগীর ট্রিটমেন্ট দেয়া যায় না!’ কিন্ত বাস্তব কথা হচ্ছে, এইটা আসলে মাছ বাজারই! এমনে করে আসলে চিকিৎসা সেবা চলে না। সবার ধারনা, ডাক্তার ওষুধ দিবে, ব্যাস, এইটাই স্বাস্থ্যসেবা! আসলে ডাক্তার এই বিশাল প্রোসেসের একটা ছোট্ট পার্ট! আসলেই বিশ্বাস করেন, ছোট্ট একটা পার্ট! এর সাথে আরো অনেক কিছু জড়িত আছে! মাঝে মাঝে কান্না চইলা আসে, একেকটা খারাপ রোগি যখন বারান্দার, আরেক বেডের নিচে, চলার রাস্তার দুই পাশে, জানালা দরজাহীন গোডাউনের মতো রুম গুলায় পড়ে থাকে! কি করবো! আমার কাজ তো ওষুধ লিখে দেয়া পর্যন্ত! ওইসব ওয়ার্ড গুলায় রাউন্ড দিতে দিতে মাঝে মাঝে দেখি গরমে ঘামে নিজেরই শ্বাসকষ্ট হয়!নিজের মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আর ওই ওয়ার্ডটায়ই একটা অ্যাজমা সিওপিডি পেসেন্ট কাতরাচ্ছে, অক্সিজেন বেড সব বুকড! কেউ শুয়ে আছে, তার বালিশের নিচে, বেডের নিচে তেলাপোকা সংসার পেতে বসে আছে! স্যালাইনটা ঝুলাবে কোনো জায়গা নাই, কোনো এটেন্ডেন্ট হয়ত হাতে ধরে দাড়াইয়া আছে। প্রতিটা এডমিশনে বিকালের মধ্যেই ওয়ার্ডবয়রা এসে বলে যায়, স্যার অক্সিজেন দেয়ার সিট, সিটের নিচের ফ্লোর সব কিন্ত বুকড, জায়গা নাই! ওদিকে আমিই তখন একটা শ্বাসকষ্টের রোগি রিসিভ করতেছি, হয়ত তখন তার স্যাচুরেশিন ৬০%! ওদিকে মানুষভাবে ডাক্তার চিকিৎসা লিখে দিলেই যেনো ম্যাজিক! মাঝেমধ্যে ওয়ার্ডের ভিতরেই দেখি প্রসাবের গন্ধ! রোগি টয়লেটের লাইনে দাড়াতে দাড়তে প্রসাব করে দিচ্ছে! শুধু রোগি না, একটা হাসপাতালে ২০০০ রোগী থাকলে নূন্যতম যদি ২ টা এটেন্ডেন্ট থাকে মানুষের সংখ্যা দাড়ায় ৪০০০!! ওদিকে যে টয়লেট ফ্যাসিলিটি, তাতে সর্ব সাকুল্য ৩০০-৪০০ লোক মোটামুটি ভাবে ইউজ করতে পারে! এখন এটেন্ডেন্ট দিবেন না, তাইলে রোগি বেডে পড়েই মরে থাকবে! হয়ত মরে গন্ধ ছুটলে কেউ টের পাবে! আয়া নাই বুয়া নাই, ক্লিনার নাই, ওয়ার্ড বয় নাই, সিস্টার নাই, অক্সিজেন নাই, ট্রলি নাই, হুইল চেয়ার নাই, ইন্টারেস্টিংলি হসপিটালে জায়গা নাই!! লিফটের সামনে, সিড়ির উপরে, খোলা বারান্দায়, টয়লেটের সামনে সব জায়গায় রোগী! আপনি টয়লেট থেকে বাইরে পা দিয়ে দেখছে, কোনো রোগির লোক সেখানে বসে মুরগীর সালুন দিয়ে ভাত খাচ্ছে! এইটা কোনো কথা! এইখানে ট্রিটমেন্ট হচ্ছে মৃত্যু পদযাত্রী কোনো রোগির! নিজেরে একবার ভাবেন ওইখানে! ৭৫০ বেডের সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে ২৫০০+ মানুষের চিকিৎসা সেবা হচ্ছে! ওদিকে আবার জনবল (ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফ) বা সাপোর্ট আছে সর্বোচ্চ ৫০০ জনের! সহজ বাংলায়, ১০০ জন লোকের যে কাজ তার ৩গুন কাজ করানো হচ্ছে তার অর্ধেক জন মানুষ দিয়ে, বাট একই সময়ে! কি, সবার শেখা ছোট বেলায় শেখা ঐকিক নিয়মের সূত্র মিলে?? মিলে না তো! আমারও মিলে না। প্রতিটা রোগি রিসিভ করি আর মনে মনে আঁতকে উঠি, ঈশ! এইটা যদি আমার কোনো আপনজন হইতো! বাট, কথা হচ্ছে, ওই রোগীটা কারো না কারোর আপনজন। কারো মা, কারো বাবা, কারো ভাই বা কারো স্ত্রী বা সন্তান! কখনো কখনো আমাদেরও কারোর মা কিংবা বাবা বা অনেক কাছের কেউ! তখন মনে হয় একটা চিৎকার দেই, ‘না এভাবে আসলে হয় না। এইটা কোনো সিস্টেম হইতে পারে না চিকিৎসার! ইয়া আল্লাহ, মানুষরে আপনি অসুস্থ বানাইয়েন না, এইখানে আইনেন না!’ লেখকঃ ডাঃ ফেরদৌস আহমেদ সাঃ সম্পাদক, মেডিসিন ক্লাব ইউনিট, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল। SHARES মন্তব্য প্রতিবেদন বিষয়: