জন্মনিবন্ধন ও আমাদের অসহায়ত্ব

প্রকাশিত: ১০:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৩

মোঃ এ এইচ আশুঃ ২০১০ সাল থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলেও যতদূর মনে পড়ে সাধারণ মানুষের জন্য সন্তান স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য চাপ আসতে থাকে ২০২১ সাল থেকে। সে মোতাবেক অভিভাবক বাচ্চার জন্ম নিবন্ধনের জন্য ছুটাছুটি করতে যেয়ে জানে ২০০১ সাল থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আগে তাদের বাবা-মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক লাগবে। শুরু হয় অভিভাবকদের দ্বিগুণ গতিতে ছুটাছুটি।

এখন অভিভাবকরা তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে যেয়ে দেখে জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে জন্ম নিবন্ধনের তথ্যে অনেক সমস্যা। যেমন নিজ নামের বানান ভুল, জন্ম তারিখ ভুল, বাবা-মায়ের বানানে আকাশ-পাতাল ভুল, কখনো দেখে বাবার নামের পিছনে বেগম লিখা, কারও মায়ের নামের জায়গায় শাশুড়ির নাম লিখা, আরও কত কি!! আমার ধারণামতে, বাড়ি বাড়ি যেয়ে তথ্য সংগ্রহ করার সময় এই ভুলগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। যার জন্ম নিবন্ধন করার জন্য তথ্য নেওয়া হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে অন্য কারও কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার জন্যও এই ভুল হতে পারে।দক্ষ্য নামের বানানে অপারদর্শী ব্যক্তির দ্বারা তথ্য সংগ্রহের জন্যও এটা দায়ী। অসতর্কভাবে তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্যও এমনটা হতে পারে।

এমতাবস্থায় এগুলো সংশোধনে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আগে আমাদের শিক্ষার হাড় কম ছিল তাই বেশীরভাগেরই স্কুল/কলেজের সার্টিফিকেট নাই। বিকল্প হিসেবে সরকারী ডাক্তারের প্রত্যয়ন পত্র লাগবে। এখানেও আরেক সমস্যা, সব ডাক্তার প্রত্যয়ন পত্র দিতে চান না। আবার কেহ কেহ দিলেও বিনিময়ে ৫০০/৭০০ টাকা গুনতে হয়েছে অভিভাবকবৃন্দের।

আবার অনেক সন্তানের; হয় বাবা, নয় মা, অনেক আগের মারা গেছে। ক্ষেত্র বিশেষ বাবা-মায়ের মধ্যে বৈবাহিক বিচ্ছেদ ঘটে। এই ক্ষেত্রে আরেকদফা ঝামেলায় সৃষ্টি হয়। অভাবী/অশিক্ষিত/সহজ সরল মানুষগুলো অভাবনীয় কষ্ট-ক্লেশের পর তাদের জন্ম নিবন্ধন ঠিক করে। কিন্তু এটা করতে যেয়ে দিনের পর দিন তাদের চাকরি-বাকরি-ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এরপর ২০২২ সালের জুলাইয়ের দিকে নিয়ম-কানুন একটু শিথিল করা হয়। এই ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই হত।

২০২৩ এর মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে একটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই পর থেকেই জন্ম নিবন্ধন করায় ঝামেলায় পড়ে যায় সাধারণ মানুষ। জন্ম তারিখ সংশোধনের করা হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য। নিজ নাম, বাবা-মায়ের নাম সংশোধনের জন্য অনেক অনেক কাগজপত্রের প্রয়োজনিয়তা দেখা দেয়। যা যোগার করতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছিল অভিভাবকবৃন্দ। যদিও টাকা-পয়সা খরচ করে এর সমাধান করা যাচ্ছিল।

কিন্তু বর্তমানে প্রায় আড়াই মাস যাবত ব্যক্তি পর্যায়ে জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবেদনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে অনুমোদিত ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড চাচ্ছে, যা শুধু নিবন্ধকদের কাছে থাকে। কর্তৃপক্ষও তাদের অপারগতা প্রকাশ করে জানায় সার্ভারে সমস্যা, ইন্টারনেট নেই, ইন্টারনেটের স্পীড কম, সব ডাটা এন্ট্রি দেওয়ার পরেও সাবমিট করা যাচ্ছে না!

এমতাবস্থায় আমরা সাধারণ জনগন কোথায় যাবো? নতুন শিক্ষার্থিদের এ-বছরের ভর্তির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পথে। তাই খুব দ্রুত ব্যক্তি পর্যায়ে জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার স্বাভাবিক করে দেওয়ার প্রত্যাশায় জনগন।

লেখকঃ সম্পাদক, চেঞ্জ নিউজ।