অন্তর্কোন্দল নিয়ে আওয়ামী লীগে টেনশন

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

মো. মনির হোসেনঃ এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব ঠেকাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলা হলেও তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা ভোটের প্রচারণা শুরুর পর পরিষ্কার হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই, প্রার্থীও নেই। তবুও দুশ্চিন্তার শেষ নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। কারণ নির্বাচনের মাঠ সবার জন্য উম্মুক্ত থাকায় প্রার্থী যেমন বেড়েছে, তেমনি দলের মধ্যে কোন্দল-সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে।

এদিকে সংঘাত এড়াতে এবার নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন জমাদানের পুরো কাজ অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সুফল মিললেও ব্যাংকে মনোনয়নের টাকা জমা দেওয়ার আগে প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনা ও ঘটেছে নাটোরে। তবে ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আভাস দিচ্ছে বড় অন্তর্কোন্দলের।

জানা গেছে, সোমবার (১৫ এপ্রিল) নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে আসন্ন সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পরে তাদের উদ্ধার করা হলেও ওই ঘটনায় করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রার্থী অপহরণের ঘটনায় মন্ত্রীর শ্যালক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা৷ তবে এখনও অভিযুক্তদের বিষয়ে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সামনের দিনে এমন ঘটনা বাড়ার শঙ্কা আছে খোদ আওয়ামী লীগেই।

গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত বড় একটা নির্বাচন, তাতে টুকটাক কিছু ঘটনা যে ঘটবে না, ঘটেনি, তা নয়। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনিকভাবে আমরা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলার ভোটে তিনটি পদে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তবে স্থানীয় তথ্য সূত্র বলছে, ১৫০টি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অন্য দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে কিছু চাপে থাকলেও ভোটের মাঠে মূল নজর আওয়ামী লীগের দিকেই। যদিও উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রাখেনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ফলে উন্মুক্ত মাঠে যে যার মতো প্রার্থী হয়েছেন। এতে মূল দল ও সহযোগী একাধিক সংগঠনের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা প্রার্থী হচ্ছেন এম পি মন্ত্রীর ছত্র ছায়ায়। যে কারণে অন্তর্কোন্দল ও নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিভেদ মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা রয়েই গেছে।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ভোটের মাঠে একই দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী থাকায় কর্মীদের মাঝেও দোটানা তৈরি হয়েছে। একটি দলের কর্মীরা একই স্থানে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন৷ কোথাও কোনো উত্তেজনা ছড়ালে তা সংঘাতে রূপ নিতে সময় লাগবে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা৷

সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্ত্রী, দলের প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের মানুষকে বিজয়ী করতে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন৷ ‘মাই ম্যান’দের সমর্থনে পিছপা হচ্ছেন না মন্ত্রীদেরও কেউ কেউ।

তৃণমূলের এমন অভিযোগ পৌঁছেছে কেন্দ্রেও। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যে কারণে দফায় দফায় সতর্ক করা হচ্ছে সংসদ সদস্যদের। শুধু তাই নয়, যুবলীগের পক্ষ থেকেও স্থানীয় নেতাদের নির্বাচনের মাঠে সতর্ক থাকার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা এড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ৮ মে প্রথম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নেই। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে। নির্বাচনে কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুষ্ঠু ভোটের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রশাসনও কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের কোনো প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। সবাই শান্তি-শৃঙ্খলা মতো ইলেকশন করবে। কেউ প্রভাব বিস্তারও করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু হলে কোন্দল আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন খোদ সরকারি দলের লোকজন। যদিও এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে নজর রাখছে ক্ষমতাসীনরা।