‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত মিনা; হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৫

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাবুর শহর হিসেবে পরিচিত মিনায় পৌঁছাতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। আরব নিউজ থেকে এতথ্য জানানো হয়েছে।

৯ জিলহজের এদিন সৌদি আরবের ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে অবস্থান নেবেন বিশ্বের হজযাত্রীরা। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক…’। মসজিদে নামিরা থেকে সরাসরি প্রচারিত হবে হজের খুতবা।

এবার হজে খুতবা দেবেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে আরাফাহর দিনে খুতবা দেওয়ার অনুমোদন দেন। আগামী ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবাহ দেবেন তিনি। এই খুতবা বাংলাসহ ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে।

এর আগে আজ বুধবার (৪ জুন) তাঁবুর শহর মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সারাদিন হজযাত্রীরা সেখানে অবস্থান করবেন। মঙ্গলবার রাতেই হজযাত্রীরা এহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া শুরু করেন। আজ জোহরের আগেই সব হজযাত্রী মিনায় নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেবেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ফজরের পর আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে রওনা দেবেন হজযাত্রীরা।

এভাবে ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মিনা, আলাফাত, মুজদালিফা ও জামারাতে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন তারা।

সৌদি প্রেস এজেন্সি কর্তৃক সম্প্রচারিত আকাশচুম্বী ছবিতে দেখা গেছে, মিনায় রাতের আলো উজ্জ্বলভাবে আলোকিত হচ্ছে, যেখানে উচ্চ প্রযুক্তির তাঁবুগুলো হজযাত্রীদের গ্রহণের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁবু নগরীর বিশাল রাস্তার হজযাত্রীদের পরিবহনের জন্য বাস প্রস্তুত। অন্যদিকে সরকারি যানবাহন এবং পদাতিক দল পাথর নিক্ষেপের অনুষ্ঠানের জন্য জামারাত কমপ্লেক্স পরিদর্শনে নিয়োজিত রয়েছে।

সৌদি গেজেট রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের পবিত্র স্থান মিনা এখন ঝলমল করছে। বুধবার সকাল থেকে ১৫ লাখেরও বেশি হজযাত্রী হজ কার্যক্রমের সূচনা উপলক্ষে বিস্তৃত তাঁবু নগরীতে অবস্থান করবেন। তারা ৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার ভোরে আরাফাতের উদ্দেশে মিনা ত্যাগ করবেন।

মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ (পবিত্র কাবা) থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত একটি ছোট উপত্যকা মিনা, হজযাত্রার জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য স্থান। মিনার তাঁবুগুলো আগুন প্রতিরোধী এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আরাম নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। তাঁবুর শহর এমন একটি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত যেখানে ২৬ লাখের বেশি হজযাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

মিনার অবকাঠামো আধুনিক প্রকৌশল এবং সরবরাহের এক বিস্ময়, যা দর্শনার্থীদের বিশাল স্রোতকে সুষ্ঠু এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। হজ অনুষ্ঠানের প্রধান স্থান-মিনা, আরাফাত এবং মুজদালিফার মধ্যে হজযাত্রীদের চলাচল সহজতর করার জন্য এই স্থানে রাস্তা, সেতু এবং টানেলের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে ২২৪টি ফ্লাইটে সর্বমোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন (ব্যবস্থাপনা সদস্য সহ) হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত একজন মহিলাসহ ১৭ জন হজযাত্রী মারা গেছেন।

এদিকে সোমবার রাতে বাংলাদেশ হজ অফিস মক্কার কনফারেন্স কক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে হজ প্রতিনিধি দল ২০২৫-এর বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের মিনা ও আরাফায় যাতায়াত, হজের দিনগুলোতে খাবার, আবাসন এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য, প্রশাসনিক দলের নেতা, কাউন্সিলর হজ, প্রশাসনিক দলের সদস্য, চিকিৎসক দলের নেতা, সভাপতি ও মহাসচিব (হাব), আইটি দলের নেতাসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।