অভিযানের ৬ ঘণ্টা পর আইভীকে গ্রেপ্তার, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ রাতভর অপেক্ষার পর শুক্রবার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে শহরের দেওভোগের বাসা থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন তিনি৷ এ সময় সেখানে তার বিপুলসংখ্যক সমর্থক অবস্থান করছিলেন। গাড়িবহর নিয়ে পুলিশও ছিল সতর্ক অবস্থানে।

নাসিকের টানা তিনবারের নির্বাচিত মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় একাধিক থানায় দায়ের করা অন্তত পাঁচটি মামলার আসামি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী৷ ওই মামলাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলেও জানান তিনি৷

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আইভীর পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ যায় সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম৷ গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জেলার অধিকাংশ নেতা-কর্মী পালালেও নিজ বাড়িতেই ছিলেন আইভী৷ তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন৷

এদিকে, রাতে আইভীকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানের খবরে সড়কে নেমে আসেন স্থানীয় কয়েক হাজার এলাকাবাসী৷ তারা ‘রাতের আঁধারে’ আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে দেবেন না বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷

পরে অতিরিক্ত পুলিশ এলেও এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে তারা পিছু হটেন৷ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়ির ভেতরে সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে কথাও বলেন৷ তবে তিনি ‘রাতে কোথাও যাবেন না’ বলে জানান৷ পুলিশ দলটি তখন তার বাড়ির ভেতরেই অবস্থান নেয়৷ ছয় ঘন্টা পর স্বেচ্ছায় পুলিশের সাথে গাড়িতে ওঠেন তিনি৷

তাকে পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাবার সময়ও হাজারো নারী-পুরুষ তার পক্ষে স্লোগান দেন৷

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন,‌ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে এলে সে সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। তিনি বলেছিলেন, দিনের আলো ফুটলে যাবেন। গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় তিনি সহযোগিতা করেছেন। তাকে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হবে।

আইভীকে বহনকারী পুলিশের গাড়িতে যুবদলের নেতাকর্মীদের হামলা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ভ্যানে হামলা হয়েছে। ওই গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ সদর মডেল থানার এক পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের দিকে নিতে দেখা যায় ওসি নাছিরউদ্দিন আহামদকে৷ ওসি হাসপাতাল যাওয়ার পথে দুই পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার কথা জানান৷

মেয়র আইভীকে বহন করা গাড়িটি ছিল সামনের সারিতে এবং পেছনে তার সমর্থকরা মুক্তির দাবিতে মিছিল করছিলেন৷ মিছিলটি গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মোড় পার হওয়া মাত্রই আমলাপাড়া স্বর্ণপট্টির প্রবেশমুখ থেকে একদল যুবক ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে৷

এ সময় দু’টি হাতবোমা বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। পরে পুলিশ দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আইভীকে নিয়ে যায়। হামলাকারীদের দলটি পরে শহরে ঝটিকা মিছিল করেন এবং আওয়ামী লীগ ও আইভীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন৷

পরে এসপি অফিসের গেটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, তারা ছিলেন সামনের দিকের গাড়িতে৷ পেছনের দিকের হামলার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন৷ বিস্তারিত পরে জানানো হবে৷