গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন: নিখোঁজ ১৭৬, উদ্ধার ১৪

প্রকাশিত: ১০:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২৪

রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্যাক্টরির ভেতরে থাকা ছয়তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়।

২০ ঘন্টা চেষ্টা করেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

জানা গেছে, গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট টানা কাজ করেছে। এর মধ্যে একদল দুর্বৃত্ত ফ্যাক্টরিতে থাকা মালামাল লুটপাট করতে যায়। তাদের মধ্যে ১৭৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম-পরিচয় দিয়েছেন।

রূপসী এলাকায় গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন টায়ার কারখানা; কর্ণগোপ এলাকায় ও পাইপ ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন ও লুটপাটকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে গাজী টায়ার, পাইট ও ট্যাংক কারখানায় হামলা চালায়। তারা সেখানকার কক্ষ ও গুদাম ঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করে। পরে দুই কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

এসব ঘটনার পর গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের নব কিশোলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী স্বজনরা। তারপর দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে তোলে পুলিশ। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। বিচার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর রোববার সন্ধ্যায় কয়েকশ লোক গাজীর কারখানায় হামলা করে। লুটপাট ভাঙচুরের পর তার কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় লোকজন।

রাত ৯টার দিকে গাজীর কারখানার ৬ তলা ভবনে ঢোকে। ওই ভবনে কেমিকেল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভেতরে লুটপাট নিয়ে দুটি পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এসময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে সেখানকার প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন লেগে যায়। পরে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানান। আটকে পড়াদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর ঢাকার ফুলবাড়িয়া, ডেমরা, কাঞ্চন, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিটের ১৫০ সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় নিখোঁজদের পরিবার ফের কারখানায় ভিড় করতে শুরু করেন। তারা ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জনের নাম-পরিচয় জানিয়েছেন। বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাব, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার।

বরপা এলাকার হোসেন মিয়া বলেন, আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খাঁন, শাহিনসহ ৫ জন নিখোঁজ। তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হয়নি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে তারা ভবনে আটকা পড়েছে। আমাদের বাঁচান। এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

ভয়াবহ এ আগুনে কারখানার আশপাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প কলকারখানা ও এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপি নেতারা অবস্থান করছেন।

সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যাপারে বলা যাবে। আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ কোনো অরাজকতা, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। প্রচলিত আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সময় কারখানার কারও সাথে যোগাযোগ করা যায় নি।