ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৪ ঘণ্টাই চলছে পানি নিষ্কাশন

প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে অসহনীয় জলাবদ্ধতা যেন নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের মধ্যে বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষের। তবে এখন নিয়মিত প্রচেষ্টায় দ্রুত অপসারণ করা সম্ভব জলাবদ্ধতা।

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এবারের ঘূর্ণিঝড়ে পানিবন্দি অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে চিরচেনা জলাবদ্ধতা। এ অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ব্যাপক কর্মতৎপরতায় পানি অপসারণে দিনরাত পাম্পের কার্যক্রম চলছে।

তথ্যমতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকায় ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সালে ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত ধানচাষ করার জন্য চারদিকে বাঁধ দিয়ে ‘ডিএনডি ইরিগেশন প্ল্যান্ট’ তৈরি করা হয়। পরে ধীরে ধীরে নগরায়নের ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে এই প্রকল্প পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ডিএনডি বাঁধের কাজ একনেকে পাস হলে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প ব্যয় শুরুতে ৫৮২ কোটি টাকা হলেও পরবর্তীতে ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। ফলে আরো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে সেনাবাহিনী।

২০১৮ সাল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এবং শিমরাইলের দুইটি হেভি পাম্প স্টেশন, ফতুল্লা, পাগলা এবং শ্যামপুরে পাম্পিং প্লান্ট, ২২টি ব্রিজ, ৬৯টি কালভার্ট, ৪টি ক্রস ড্রেন, ১টি পুশ মেথড ,৩৭টি খাল,৪৪ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো সেনাবাহিনী কর্তৃক পুনরুদ্ধারের পরে তার পাশে তৈরি করা ওয়াকওয়েগুলো যেন এখন পর্যটন স্পট। ভোর-সকালে বা বিকেলে জনসাধারণ নির্মল আবহাওয়া ও মুক্ত বাতাসের জন্য জড়ো হচ্ছে ওয়াকওয়েতে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমেল টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি এলাকার অধিকাংশ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে কাজ শুরু হয় পানি অপসারণের। পানি অপসারণে পাম্পের মাধ্যমে চলে এই কার্যক্রম।

পাম্প হাউজ সূত্রে জানা যায়, শিমরাইল ও আদমজী পাম্প হাউজের ১৩টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প এবং ফতুল্লা, কদমতলী ও শ্যামপুরের পাম্পিং প্লান্টের সকল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে। দুই পাম্প হাউজে পার সেকেন্ডে সাড়ে পাঁচ কিউবিক মিটার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৩টি পাম্প চালুর পাশাপাশি ৩টি পাম্পিং প্লান্টের পাম্প চালু রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রমাণিক বলেন, এই বছরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং জলাবদ্ধতাও দূর হবে। এরপর থেকে এসব এলাকার বাসিন্দারা পুরোপুরি সুফল পাবে।

এ সময় বাঁধ সংলগ্ন খালগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।