স্মৃতিতে আবুল সরকার

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩

মনির হোসেনঃ আবুল সরকার, একজন সুরকার, গীতিকার, শিল্পী সে ফতুল্লার আবুল সরকার অথবা বড় আবুল সরকার নামে পরিচিত ছিল। সে অনেক বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন, তার অসংখ্য শিষ্য রেখে গেছেন, তার মধ্যে শাহ আলম সরকার, আব্দুল লতিফ সরকার আরো অনেক। রোববার রাত ১০টায় তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর।

রাতেই তাকে ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আবুল সরকার ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার কফিলউদ্দিন সরকার ও আফিরুন বেগমের ছেলে।

১৯৫৫ সালের ১০ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং এলাকায় আবুল সরকার জন্ম গ্রহন করেন। গানের জগতে তিনি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফতুল্লায় বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

তবে তাকে নিয়ে আমার ছোট বেলার অনেক স্মৃতি, আমি তার গানের খুবই ভক্ত ছিলাম, যতটুকু মনে পড়ে আমি তখন মদনগঞ্জে খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতাম, একদিন আমাদের সকলের খুব প্রিয় ইসলামপুরের বাসিন্দা আব্দুল হক মাদবরের ছোট ভাই ফজলুল হক মাদবরের সাথে প্রথম তার গান শুনতে যাই, সাথে ছিলেন রফিকুল ইসলাম রবি, হারুনুর রশীদ, বাচ্চু ভাই, সবার কথা মনে পরছে না, স্থানটি ছিল মাহমুদ নগর খেলার মাঠ, সেখানে প্রথম আবুল সরকারকে দেখলাম গান শুনলাম খুব ভালো লাগল, তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সে কারো লেখা গান গাইতেন না, নিজের লেখা গান সব সময় গাইতেন, এমন কি পালা গানের প্রশ্নের উত্তরগুলি সে বোখারী শরীফের কতো নম্বর পৃষ্ঠা থেকে বলছেন তাও বলে দিতেন।

সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে ১৯৮৮ সনে বন্যা নিয়ে আবুল সরকার একটি গন সংগীতের ক্যাসেট খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো, সে সময়ে, খাজার জীবনী, বড় পীরের জীবনী, নবীর জীবনী, বিভিন্ন পীর আওলিয়াদের জীবনী, বিচ্ছেদ গান সহ অসংখ্য ক্যাসেট। সারা দেশ ব্যাপী জনপ্রিয় ছিল।

আমি তার গানের এতোই ভক্ত ছিলাম যে বলে বোঝানো যাবে না। একটি ছোট ঘটনা বলি, একদিন রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন রাত আনুমানিক ২ টা বাজে, তখন তো মাইকের প্রচলন কানে হঠাৎ ভেসে আসলো আবুল সরকারের সেই বিখ্যাত গান ‘নিশিথে স্বপনে দেখি দুই নয়নে কি রূপ দেখিলাম স্বজনী, কেমনে ভুলিবো তারে স্বপনে দেখিলাম যারে লাগে যেন তারে চিনি চিনি’ আর কি ঘুম হয়! আমার ছোট বেলার বন্ধু সহিদুল ইসলাম আমি তাকে দেশী বলে ডাকতাম তারা তখন নতুন বাড়ী করেছে বিসিকের মোড়ে, তখন বিসিকের জায়গা ভরাট হয় নাই। তাকে তখন ঘুম থেকে উঠালাম বললাম চলেন ভোলাইল আবুল সরকারের গান হচ্ছে, সে ও তার গানের খুবই ভক্ত ছিল, দুজনে তখনই হাটা শুরু করলাম ইরি ধানের জমির আইল দিয়ে। তখন বিসিকের জমিগুলিতে ইরি ধান চাষ হতো, ভোলাইলের কাছাকাছি আসলে দেখি আর মাইকের আওয়াজ হয় না, তখন দুজনেরই মন খারাপ হয়ে গেল, কি করা যায় গেলাম পঞ্চবটীর দিকে পকেটে কারোই পয়সা নাই, এখন যেখানে পার্ক হয়েছে সেখানে যাওয়ার পর এক রিক্সা ওয়ালার সাথে দেখা সে রিক্সা নিয়ে বসে আছে, তাকে জিজ্ঞাস করতেই সে বলল কাশিপুর খিল মার্কেট গান হচ্ছে আবুল সরকার আর মাখন দেওয়ানের, ছুটলাম সেই দিকে কাশীপুরের কাছাকাছি যেতেই মাইকের আওয়াজ পেতে শুরু করলাম। যতক্ষনে পৌছালাম গানের প্যান্ডেলে ততক্ষনে মসজিদে আযান হচ্ছে। তখন মনকে সান্তনা দিলাম আমরা ঠিকই শুনেছি, স্টেজে আবুল সরকার বসে আছে, তাকে দেখা মাত্র মুখে হাসি ফুটে উঠল সকল ক্লান্তি, কষ্ট দূর হয়ে গেল।

আমার মতো অসংখ্য ভক্ত ছিলো আবুল সরকারের, সবাইকে কাদিঁয়ে রোববার রাতে সে চলে গেলো না ফেরার দেশে, আর হয়তো দেখা যাবে না কোনো স্টেজে, কোনো অনুষ্ঠানে, তবে আবুল সরকার তার গানের মাধ্যমে আজীবন বেঁচে থাকবেন তার ভক্তদের মাঝে। পরিশেষে এই দোয়াই করি যেখানেই থাকেন ভালো থাকেন সরকার সাহেব, সৃস্টিকর্তা যেন আপনাকে জান্নাত বাসী করেন।

লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।